শতমূল (Asparagus racemosus)

শতমূল
উপকারিতাঃ শতমূলী (Asparagus racemosus) একটি অত্যন্ত উপকারী আয়ুর্বেদিক ভেষজ। এর বহুবিধ গুণাবলী রয়েছে যা শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সহায়তা করে। এটি শক্তি, শুক্র ও দুগ্ধ বর্ধক এবং পুষ্টি কারক।

সাধারণ খাওয়ার নিয়ম:
শতমূল চূর্ণ ৩–৬ গ্রাম সকাল ও রাতে গরম দুধ বা মধুর সঙ্গে।

🧬 শতমূলের পুষ্টিগুণ:
শতমূল মূলত শুকনো মূল হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যেখানে নানা ধরনের পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়:

উপাদান পরিমাণ (প্রতি ১০০ গ্রাম শুষ্ক মূলে)আনুমানিক:
ডায়েটারি ফাইবার- ৩–৫ গ্রাম
প্রোটিন- ৩–৪ গ্রাম
কার্বোহাইড্রেট- ২৫–৩০ গ্রাম
স্যাপোনিন- ৩–৮%
ভিটামিন A, C, E- অল্প পরিমাণে
ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও জিঙ্ক- ট্রেস পরিমাণে
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট – উচ্চ পরিমাণে (ফ্ল্যাভোনয়েড, অ্যাসপারাগিন)
🔎 সূত্র:
Goyal RK et al. Pharmacognosy Reviews (2003)
Indian Journal of Experimental Biology, 2000

🌿 শতমূলের উপকারিতা (বৈজ্ঞানিক ও আয়ুর্বেদিক উভয় দৃষ্টিভঙ্গিতে):
১. নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্য উন্নত করে
এটি প্রোল্যাক্টিন হরমোন বাড়ায়, যা স্তন্যদানের সময় দুধ উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে।
অনিয়মিত ঋতুচক্র, বন্ধ্যত্ব ও PCOS সমস্যায় উপকারী।
🔹 উৎস: Sharma et al., Journal of Ethnopharmacology, 1996

২. পুরুষের প্রজনন স্বাস্থ্যে উপকারী
শুক্রাণুর গুণগত মান ও সংখ্যা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
🔹 উৎস: Chauhan et al., Asian Journal of Andrology, 2001

৩. অ্যাডাপ্টোজেনিক গুণ
মানসিক চাপ, উদ্বেগ ও বিষণ্নতা কমাতে সহায়তা করে।
🔹 উৎস: Rege et al., Ancient Science of Life, 1989

৪. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
শতমূলে থাকা স্যাপোশুক্রনিন ও ফ্ল্যাভোনয়েড রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা জোরদার করে।

৫. অম্বল, গ্যাস্ট্রিক ও আলসার প্রতিরোধে
এটি পাকস্থলীতে প্রোটেকটিভ স্তর তৈরি করে অ্যাসিডিটি ও আলসার প্রতিরোধ করে।
🔹 উৎস: Sairam et al., Indian Journal of Pharmacology, 2003

৬. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক
রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে যা কিছু গবেষণায় দেখা গেছে।

৭. পুষ্টি কারক: এটি শরীরের পুষ্টি যোগান দেয় এবং ওজন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে, বিশেষ করে যারা অপুষ্টিতে ভুগছেন বা ওজন বাড়াতে চান তাদের জন্য এটি উপকারী।

✅ খাওয়ার নিয়ম (আয়ুর্বেদ অনুযায়ী):
শতমূল চূর্ণ ৩–৬ গ্রাম সকাল ও রাতে গরম দুধ বা মধুর সঙ্গে
⚠ গর্ভবতী নারী ও ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

📚 উল্লেখযোগ্য রেফারেন্স:
1. Goyal RK, Singh J. Asparagus racemosus – an update. Indian Journal of Experimental Biology. 2003.
2. Sairam K, Priyambada S, Aryya NC, Goel RK. Gastroduodenal ulcer protective activity of Asparagus racemosus. Indian J Pharmacol. 2003.
3. Sharma U et al. Immunostimulant activity of Asparagus racemosus. J Ethnopharmacol. 1996.
4. Ayurvedic Pharmacopoeia of India, Govt. of India, Ministry of AYUSH.

🪴 শতমূলের রোগভিত্তিক প্রয়োগ ও মাত্রা (Dosage with Reference):

✅ নারী বন্ধ্যত্ব, হরমোন ভারসাম্যহীনতা
শতমূল চূর্ণ ৩–৬ গ্রাম চূর্ণ
Ayurvedic Pharmacopoeia of India, Vol 2; Phytomedicine, 2018; 47:45–56
✅ স্তন্যদানে সমস্যা (গ্যালাক্টোগগ)
শতমূল চূর্ণ ৫ গ্রাম চূর্ণ + ২০০ মি.লি. দুধ, ২ বার
IJAR, 2010; 1(1): 29-36; J Ethnopharmacol. 2005; 97(2):213–216
✅ গ্যাস্ট্রিক, আলসার ও অম্লতা
শতমূল ক্বাথ: ৫০–১০০ মি.লি/দিন
J Ethnopharmacol. 2005; 97(2): 213-216
✅ ডায়াবেটিস (টাইপ-২)
শতমূল চূর্ণ ৩–৬ গ্রাম চূর্ণ
J Ayurveda Integr Med. 2011; 2(2):91–97
✅ মানসিক চাপ ও উদ্বেগ
শতমূল ৩–৬ গ্রাম চূর্ণ দিনে ২ বার স্নায়ুবর্ধক হিসেবে
Phytother Res. 2004;18(12):1035–1039
✅ প্রোস্টেট ও প্রস্রাবের সমস্যা
শতমূল ক্বাথ ৫০–১০০ মি.লি দিনে ২ বার
Charaka Samhita, Chikitsa Sthana, Indian J Med Res. 2001;113:13–20
✅ রক্তশূন্যতা (অ্যানিমিয়া)
শতমূল ৩–৬ গ্রাম চূর্ণ + গুড় / দুধ
J Ayurveda Integr Med. 2014; 5(3):170–178

📌 পরামর্শ:
সর্বোত্তম ফলের জন্য শতমূল দুধ, ঘি বা মধুর সাথে সেবন করুন।
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রোগ ও দেহপ্রকৃতির ভিত্তিতে ব্যবহার করা উচিত।

⚠ সতর্কতা (Precautions):
গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া সেবন না করাই ভালো।
ডায়াবেটিস বা হরমোন সংক্রান্ত ওষুধের সাথে একত্রে খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা প্রয়োজন।
অতিরিক্ত মাত্রায় সেবনে ডায়রিয়া বা পেটে গ্যাস হতে পারে।

🧪 রেফারেন্স গ্রন্থ ও গবেষণা উৎস:
1. Ayurvedic Pharmacopoeia of India, Govt. of India
2. Bhavaprakasha Nighantu, An Ayurvedic Classical Text
3. Phytomedicine Journal (2018): Effects on reproductive hormones
4. Journal of Ethnopharmacology (2005): Gastroprotective effects
5. International Journal of Ayurveda Research (2010): Lactation enhancement
6. Journal of Ayurveda and Integrative Medicine (2011, 2014): Antidiabetic and hematinic effects
7. Phytotherapy Research (2004): Adaptogenic and antistress